রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২:১৪ অপরাহ্ন
আমরা প্রায়ই আবহাওয়া নিয়ে অভিযোগ করি, বিশেষ করে এই পৃথিবীতে যখন আবহাওয়ার চরম বিষয়গুলো স্বাভাবিক হয়ে যায়। কিন্তু ঘণ্টায় ৮,০০০ কিলোমিটার বাতাস কিংবা শিশা গলে যাবার মতো প্রচণ্ড তাপের মধ্যে যদি আমাদের ছুটির দিন কাটাতে হয়? তখন কেমন হবে?
আবহাওয়া ভালো হোক আর খারাপ হোক পৃথিবীতে এটি স্থায়ী ছকের মতো। কিন্তু এর বাইরে মহাকাশের গভীরে আরো চরম আবহাওয়া রয়েছে। তারই কয়েকটি তুলে ধরে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি। সেগুলো হলো-
অস্বাভাবিক শুক্র গ্রহ
বাড়ির কাছের গ্রহটি নিয়ে শুরুতেই কথা বলা যাক। এটি হচ্ছে শুক্র। সৌরজগতের মধ্যে বসবাসের সবচেয়ে অনুপযোগী জায়গা হলো শুক্র গ্রহ। এখানকার বায়ুমণ্ডলের ঘনত্ব বেশি এবং এটি কার্বন ডাই অক্সাইড দ্বারা গঠিত। শুক্র গ্রহে বায়ুমণ্ডলের চাপ পৃথিবীর চেয়ে ৯০ গুণ বেশি।
এখানকার বায়ুমণ্ডল সূর্যের বিকিরণকে আটকে রাখে, যার অর্থ হচ্ছে শুক্র গ্রহের তাপমাত্রা ৪৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছতে পারে। সুতরাং এখানে পা রাখা মাত্রই আপনি সেদ্ধ হয়ে যাবেন। শুক্র গ্রহের বৃষ্টি হচ্ছে ধ্বংসাত্মক সালফিউরিক অ্যাসিড।
এটি পড়ামাত্রই শরীর কিংবা নভোচারীর পোশাক পুড়ে যাবে। সেজন্য এখনো শুক্র গ্রহে কেউ যেতে পারেনি। এই গ্রহের চরম তাপমাত্রার কারণে বৃষ্টি পড়ার আগেই বাষ্প হয়ে যায়।
সবচেয়ে অদ্ভুত বিষয় হচ্ছে, শুক্র গ্রহে তুষারপাত হয়। কিন্তু এটি পৃথিবীর তুষারপাতের মতো নয়। এখানকার তুষারপাত হচ্ছে ধাতব, যেটি কঠিন পাথর দিয়ে তৈরি। এই ধাতব বস্তু বায়ুমণ্ডলে মিশে যায়।
উত্তাল গ্রহ নেপচুন
আমাদের সৌরজগতের অন্যদিকে ইউরেনাস এবং নেপচুন গ্রহ রয়েছে। নেপচুন গ্রহটি পৃথিবী থেকে সবচেয়ে দূরে। এখানে ঠাণ্ডায় জমে থাকা মিথেন গ্যাসের মেঘ রয়েছে। সৌরজগতের মধ্যে নেপচুনের বাতাস সবচেয়ে বিধ্বংসী। কারণ এখানকার উপরিভাগ অনেকটা সমতল।
ফলে মিথেন গ্যাসযুক্ত বাতাসের গতিকে থামানোর কোন উপায় নেই এখানে। এর গতি ঘণ্টায় ২,৪০০ কিলোমিটার পর্যন্ত উঠতে পারে। এখানকার গড় তাপমাত্রা -২০০ ডিগ্রি। অর্থাৎ নেপচুনের উপরিভাগে যাওয়া মাত্রই আপনি সঙ্গে সঙ্গে ঠাণ্ডায় জমে যাবেন।
সৌরজগতের বাইরের গ্রহগুলো
আমাদের সৌরজগতের বাইরে এমন কিছু গ্রহ আছে যেগুলো সূর্যের চারপাশে প্রদক্ষিণ করে। ব্রিটেনের ওয়ারউইক ইউনিভার্সিটির গবেষক টম লুডেন সৌরজগতের আবহাওয়া নিয়ে গবেষণা করেন। অন্য গ্রহগুলোতে বায়ুমণ্ডলের অবস্থা সম্পর্কে জানা তার কাজ।
সৌরজগতের বাইরের গ্রহগুলোর বিষয়ে তিনি বিশেষজ্ঞ, বিশেষ করে একটি গ্রহ আছে যেটির নাম এইচডি১৮৯৭৩৩বি। গভীর নীল এই গ্রহটি ৬৩ হাজার আলোকবর্ষ দূরে। এটি চরম আবহাওয়ার জন্য পরিচিত। এই গ্রহটি দেখতে সুন্দর হতে পারে কিন্তু এর আবহাওয়ার অবস্থা খুবই বিধ্বংসী।
এই গ্রহে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৮,০০০ কিলোমিটার এবং এটি পৃথিবীর তুলনায় ২০ গুণ বেশি সূর্যের কাছাকাছি। এখানে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা ১৬০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস- অর্থাৎ গলিত লাভার মতো গরম। লুডেন বলেন, ‘আমাদের গ্রহের পাথরগুলো তরল হয়ে বাষ্প হয়ে যাবে অথবা গ্যাসে রূপান্তরিত হবে’।
কোথাও কি বসবাসযোগ্য জায়গা আছে?
লুডেন বলেন, পৃথিবীর সমান আরো গ্রহ আছে যেগুলো এম ডর্ফ অথবা রেড ডর্ফ নক্ষত্রের চারপাশে প্রদক্ষিণ করে। এগুলো হচ্ছে ছায়াপথের সবচেয়ে পরিচিত নক্ষত্র। কিন্তু এরা ছায়ার ভেতরে লুকিয়ে থাকে। এগুলোর আলো এতো কম যে পৃথিবী থেকে খালি চোখে দেখা যায়না। এসব গ্রহ বসবাসযোগ্য কিনা সেটি ভিন্ন এক প্রশ্ন।
তিনি বলেন, ‘সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে এমন অনেক গ্রহ আছে যেগুলোর অবস্থান সূর্য থেকে খুব একটা দূরে নয় আবার কাছেও নয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে এসব গ্রহে যাকে প্রদক্ষিণ করছে তার দিকে একটি মুখ করে থাকে। যেমনটা চাঁদ সবসময় পৃথিবীর দিকে মুখ করে রাখে। সেজন্য আপনি একপাশে সবসময় দিনের আলো পাবেন এবং অন্যদিকে সবসময় রাত থাকবে। আপনি যখন হারিকেনের শক্তিসম্পন্ন ঝড়ের কম্পিউটার মডেল তৈরি করেন তখন সেটি দিন থেকে রাতের দিকে যায়।’
তিনি বলেন, ‘টাইডাল লকিং প্রভাবের কারণে এটি হয়। গ্রহের একটি পাশ অপর পাশের চেয়ে অনেক বেশি উত্তপ্ত হয়ে যায়। ফলে তাপ বিতরণের সময় সেখানে শক্তিশালী বাতাস তৈরি হয়।’
লুডেন বলেন, এগুলো একটি মডেলের অনুমান মাত্র। অন্য বিশেষজ্ঞরা এসব গ্রহে জীবন নিয়ে আশাবাদী। ড. ইঙ্গো ওয়াল্ডম্যান বলেন, বায়ুমণ্ডলের স্তর যদি যথেষ্ট মোটা হয়, তাহলে দিন থেকে রাতের প্রবাহ এমনভাবে হবে যাতে রাতের সময়টা ঠাণ্ডায় জমে না যায়।
আরেকটি মডেলে বলা হচ্ছে, দিনের বেলায় সবচেয়ে উষ্ণ জায়গা থেকে পানি যখন বাষ্প হয়ে যায়, তখন সেটি মেঘ হিসেবে ঘনীভূত হয়। ফলে দিনের আলোর জায়গায় স্থায়ী মেঘ তৈরি করে। ফলে যতদিন আমরা পৃথিবীর বাইরে অন্য আরেকটি গ্রহে বসবাসযোগ্য জায়গা পাচ্ছিনা, ততদিন পর্যন্ত এখানকার মতো জায়গা আর নেই।